Saturday, February 14, 2015

গল্প নয় বাস্তব সত্য -4

গল্প নয় বাস্তব সত্য -4 =============== অপেক্ষার প্রহর অনেক দীর্ঘ হয় ৷ সময় যেন কাটছে না ৷ কখন বাজবে এগারটা? একাকি অপেক্ষমান ভাই ৷ অবশেষে এগারটায় সাক্ষাৎ কক্ষের দিকে ঢুকবে এ সময় জেল পুলিশের দেহ তল্লাশি ৷ মোবাইল মানিব্যাগ সব সাথে ৷ জেল পুলিশ বলছে দুশ টাকা দাও ৷ দিয়ে ভেতরে ঢুকল ভাই ৷ শত শত মানুষের সমাগম ৷ পা ফেলার যায়গা নাই ৷ প্রচন্ড গরম ৷ যদিও ওপরে কয়েকটি ফ্যান চলছে ৷ ঘাম ঝরছিল সকলের শরীর থেকে ৷ এদিক ওদিক উকি মারে ভাই না ছোটকে দেখা যাচেছ না ৷ মোটা মোটা রডের ব্যরিকেডের সাথে মোটা গ্লাস লাগানো মাঝখানে ছয় সাত ইঞ্চি জায়গায় টিন লাগানো ৷ টিনে তারকাটার ফুটো ৷ গ্লাসের ওপাশ থেকে কাগজ কলম হাতে একলোক ইশারা করে বলছে টিনের ফুটোয় কান লাগাতে ৷ তাই করলেন ভাই বলছে আসামির সাথে দেখা করবেন ? হ ৷ নাম, বাবার নাম, থানার নাম বলেন ৷ আর কোন জায়গায় আছে বলেন ৷ জানিনা কোথায় আছে, তবে গতকাল এনেছে ৷ ঠিক আছে খুজে এনে দেব তিনশ টাকা লাগবে ৷ জেল কোর্ট সব জায়গায় যেন ফিক্সড রেট তিনশ ৷ না ভেবেই ভাই বললো ঠিক আছে খুজে আনুন ৷ লোকটি বললো এখানেই দ্বারিয়ে থাকুন, কোন দিকে সরবেননা ৷ ওকে ভাই ৷ প্রায় বিশ মিনিট পর লোকটি আসলো সাথে ছোট ৷ কিরে ভাইয়া তোর কি খবর ৷ খুব কষ্ট হচেছ বুঝি? ছোট মনে হয় ভাইয়ের মুখটা দেখেই বুঝে গেছে ভাইয়ের বুকের ভেতরটায় কতটা কষ্ট ৷ ছোট নিজেকে শক্ত করে বললো না কোন সমস্যা নাই ৷ আপনি চিন্তা করবেননা ৷ এরই মধ্যে লোকটি বললো ভাই টাকাটা দেন ওই যে ওনার কাছে দেন ৷ ভাই জেল পুলিশের হাতে তিনশ টাকা দিলো ৷ ছোট বলছে ভাইয়া আম্মা আব্বা জানে? না সূচক উত্তর ভাইয়ের ৷ তোর কি লাগবে বল, টাকা, খাবার ৷ তোরতো অনেক কষ্ট হয় ৷ ছোট বললো ভাইয়া খাবার বেশি দিয়েননা ৷ গতকাল যেগুলো দিছিলেন সব ওরা নিয়া গেছে ৷ কারা? কয়েদিরা ৷ এই কয়েদিরাই জেলখানায় মাতব্বরি করে ৷ ঠিক আছে টাকা দিয়ে যাব তুই কিনে কিনে খাস ৷ ভাইয়া এক পেকে স্টার সিগারেট দিয়েন ৷ কেন বিরি কি করবি? ভাইয়া আমি আসার সময় ম্যাট বলছে তোর সাক্ষাত আইছে আমার লাইগ্যা এক প্যাকেট স্টার দিতে বলবি ৷ আচ্ছা ঠিক আছে ৷ তুই চিন্তা করিস না ভাইয়ে আছি না ৷ রবিবারেই তোর জামিন হইয়া যাইবো ৷ সাক্ষাতের সময় শেষ ৷ বিদায় নিয়ে চলে আসলো ভাই ৷ ছোট ও ভিতরে চলে গেল ৷ ছোটর জানি কেমন লাগছে জানেনা ভাই ৷ কিন্তু ভাইয়ের মনটা খারাপ ৷ ভাই ভাবছে আমার ছোটকে ওরা মারবে নাতো? বাইরে বেরুলো ভাই ঘামে চুপচুপে বদন ৷ কত কথা বলার ছিল ছোটকে সব বলা হয়নি ৷ ভাই আগে কখনো ছোটর জন্য এতটা চান অনুভব করেনি আজ তিনদিন যতটা করছে ৷ সব সময় ফোন করে খোজ নিতো ৷ পডালেখা ও খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করিস ৷ কিন্তু আজ তিনদিন খেতে গেলে মনেহয় ছোট কি খেয়েছে? গোসলের সময়ও ভাবে ছোট কি গোসল করতে পারে ঠিকমতো? আরও কতকিছু ৷ বাইরে বেরিয়ে একটু জিরিয়ে নিলো ভাই ৷ তারপর একলোককে বললো ভাই ভিতরে খাবার পাঠাবো কিভাবে ? লোকটি বললো ওইযে ক্যান্টিনে যান ওখান থেকে সব পাঠানো যাবে ৷ ধন্যবাদ বলে ক্যান্টিনে গেল ভাই ৷ কারো কাছ থেকে কোন তথ্য জানলে ৷ তাকে ধন্যবাদ জানাতে কখনো ভুল হয়না তার ৷ ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলো ৷ আরো কিনতে চায় কিন্তু ছোট যে নিষেধ করেছিল ৷ ওরা নাকি ছিনিয়ে নিয়ে যায় ৷ ক্যান্টিন থেকে একটা বিলের কপি দিল ভাইকে ৷ দিয়ে বললো আপনি চলে যান আসামি খাবার পেয়ে যাবে ৷ ঠিক আছে ৷ এবার টাকা দিতে হবে ৷ ক্যান্টিন থেকে জেনে নিল টাকা কিভাবে দিবে? পরে যেখানে গিয়ে টাকা দিল ৷ কোনকিছুই ভাল লাগছেনা ভাইয়ের ৷ ইতি মধ্যেই জুমার আযানের আওয়াজ ভেসে আসলো কানে ৷ ওজু করে মসজিদে গেল ৷ নামাজ শেষে মহান রবের দরবারে দুহাত তুলে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে তাঁর দরবারে ফরিয়াদ করলো ৷ হে আল্লাহ আমার ভাইকে মুক্ত করে দাও ৷ সকল মজলুমকে তুমি হেফাজত কর ৷ তুমিতো সব পারো, তুমিতো সব জান ৷ এখনো বাবা মাকে বলা হয়নি ছোটর বিপদের খবর ৷ চলবে..........

No comments:

Post a Comment